ডিবি প্রধান বলেন, দুই থেকে তিন মাস আগে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। তারা পরিকল্পনা করেছিল ঢাকায় হত্যা করবে। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশের নজরদারি ও ঢাকায় হত্যাকাণ্ডের পর হত্যার সব ক্লু পুলিশ বের করেছে বলেই হত্যাকারীরা কলকাতায় এমপিকে হত্যা করেছে।
তিনি বলেন, মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামানের বাসা একটি গুলশানে, আরেকটি বসুন্ধরায়। এই দুই বাসাতেই অনেকদিন ধরে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। এই বাসার মালিক শাহীন নিজে। বাসায় মিনি মদের বার রয়েছে। আনারকে হত্যার নেপথ্যে রাজনীতি বা অর্থনৈতিক যে কারণই থাকুক না কেন বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে চেয়েছিল কিন্তু হত্যাকারীরা পারেনি।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা কলকাতায় গত ২৫ এপ্রিল একটি বাসা ভাড়া নেয়। তারা ৩০ এপ্রিল ওই বাসায় ওঠে। যিনি হত্যার পরিকল্পনা করেছেন তিনি ও আরেকজনসহ মোট তিনজন বিমানযোগে কলকাতার ভাড়া বাসায় ওঠে।
তারা দুই মাস ধরে খেয়াল রাখছে কখন আনারকে কলকাতায় আনা যাবে। গত ১২ মে আনার বন্ধু গোপালের বাসায় যায়। সেখানে আরও দুজনকে হায়ার করা হয়। তারা ওই বাসায় আসা যাওয়া করবে।
তারা হলেন, জিহাদ বা জাহিদ ও সিয়াম। মাস্টারমাইন্ড গাড়ি ঠিক করে। কাকে কত টাকা দিতে হবে। কারা কারা হত্যায় থাকবে, কার দায়িত্ব কি হবে। আমার কিছু কাজ আছে বলে ৫/৬ জন রেখে ১০ মে বাংলাদেশে চলে আসেন শাহীন।
গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, তাঁরা আধা ঘণ্টার মধ্যে সব কাজ সম্পন্ন করেন। হত্যার পর একজন এমপি আনোয়ারুলের মোবাইল ফোন নিয়ে বাইরে চলে যান। আর লাশের হাড় থেকে মাংস বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর হাড়গুলো একটি ব্রিফকেসে করে বাইরে নিয়ে যান। তারপর মাংসগুলো আলাদা করে নিয়ে যান। এমনকি কেউ যেন সন্দেহ না করতে পারেন, তার জন্য মাংসের মধ্যে হলুদ লাগিয়ে নেন।
চিকিৎসার জন্য ১২ মে কলকাতায় গিয়েছিলেন আনোয়ারুল। চলতি মাসের শুরুর দিকে তিনি কলকাতায় গিয়ে নিখোঁজ হন। গতকাল বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানান, আনার খুন হয়েছেন। তবে এখনো তাঁর মরদেহ উদ্ধার হয়নি।
কলকাতায় আনোয়ারুল যে বাড়িতে উঠেছিলেন, সেটির সিসিটিভি ফুটেজের বরাত দিয়ে ব্যারাকপুর পুলিশ জানিয়েছে, ১৩ ও ১৫ মে সেই বাড়ি থেকে দুই ব্যক্তি বড় বড় ব্যাগ নিয়ে বের হয়েছেন।
গতকাল বিধাননগর পুলিশ জানায়, ১৩ মে কলকাতার নিউ টাউনের অ্যাকুইটিকা এলাকার একটি ডুপ্লেক্স বাড়িতে এমপি আনোয়ারুলকে হত্যা করা হয়। ওই বাড়ির মালিক রাজ্য শুল্ক বিভাগের কর্মচারী সঞ্জীব ঘোষ। তিনি মার্কিন নাগরিক আক্তারুজ্জামানের কাছ বাড়িটি ভাড়া দিয়েছেন।
গতকাল সকালে বিধাননগর, ব্যারাকপুর পুলিশ ও স্পেশাল টাস্কফোর্সের সদস্যরা বাড়িটিতে যান এবং সেখানে তল্লাশি চালান। তাঁরা সেখানে রক্তের দাগ পেলেও কোনো মরদেহ দেখতে পাননি।
মরদেহ উদ্ধার না হলেও সুনির্দিষ্ট কিছু প্রমাণের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, কলকাতার নিউ টাউনের অভিজাত আবাসিক এলাকার সঞ্জীভা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয় তাঁকে। হত্যার পর মরদেহ টুকরা টুকরা করে অজ্ঞাতনামা স্থানে গুম করে ফেলেছে খুনিরা।
এ ঘটনায় পুলিশ ঢাকার মোহাম্মদপুর ও সাভার থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা পাঁচ কোটি টাকার চুক্তিতে কলকাতায় ভাড়াটে খুনি হিসেবে কাজ করেছেন। পুরো কিলিং মিশনে নেতৃত্ব দেন আমানউল্লাহ নামের একজন। তাঁকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় দায়ের করা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।